শ্রীপুর (দক্ষিণ) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্র
তিন যুগ ধরে বন্ধ স্বাস্থ্যকেন্দ্র সেবাবঞ্চিত ৫০ গ্রামের মানুষ
- আপলোড সময় : ৩০-১২-২০২৪ ০৯:৩৬:৩০ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩০-১২-২০২৪ ০৯:৩৬:৩০ পূর্বাহ্ন
তানভীর আহমেদ ::
হাওরবেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলার পাঠাবুকা গ্রামে অবস্থিত শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রটি প্রায় তিন যুগ ধরে বন্ধ থাকায় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত এই অঞ্চলের ৫০ গ্রামের মানুষজন। স্থানীয়দের অভিযোগ, দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতার কারণে টানা তিন যুগ ধরে বন্ধ আছে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। চালুর বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিশু-কিশোর, বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীসহ হাজার-হাজার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে সবার মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় দিনদিন কদর বাড়ছে হাতুড়ে ডাক্তার, স্থানীয় ফার্মাসিস্ট ও কবিরাজদের।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর (দক্ষিণ) ইউনিয়নের পাঠাবুকা, সুলেমানপুর, আনন্দনগর, নিশ্চিন্তপুর, মানিকখিলা, ভবনীপুর, লামাগাঁওসহ অন্তত ৫০টি গ্রামের চারপাশ বছরের ছয়মাস গভীর পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এই গ্রামগুলোর চারপাশে রয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওর, মহালিয়া, কানামুইয়া, বর্ধিত গুরমাসহ বেশ কয়েকটি হাওর। বর্ষায় গ্রামগুলোর লোকজনের যাতায়াত মাধ্যম নৌকা আর হেমন্তে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বা পায়ে হাটা পথ। উপজেলা সদর থেকে শ্রীপুর (দক্ষিণ) ইউনিয়নের ওই সব গ্রামের দূরত্ব অন্তত ৮-১০ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরে শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকার কারণে চিকিৎসার প্রয়োজনে ইউনিয়নবাসীকে উপজেলা সদরে অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা পার্শ্ববর্তী নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা অথবা ধর্মপাশা উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে যেতে হয়।
জানাযায়, উপজেলার শ্রীপুর (দক্ষিণ) ইউনিয়নের পাঠাবুকা গ্রামের শ্রীপুর (দক্ষিণ) ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি পাঠাবুকা গ্রামসহ আশপাশের অর্ধশতাধিক গ্রামের সকল বয়সের মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসাবেই চালু করা হয় ১৯৬০ সালের দিকে। চালুর পর ১৯৮৪ ও ১৯৮৮ সালে বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপজেলার পাঠাবুকা গ্রামে অবস্থিত এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। এরপর থেকেই কেন্দ্রটির কার্যক্রম বন্ধ আছে। এরপর থেকে আর সেখানে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়নি। চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় যাতায়াতের দুর্গম এই অঞ্চলের ৫০টি গ্রামের অন্তত ৪২ হাজার লোকজন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানায়, ১৯৮৮ সালের বন্যায় উপজেলার শ্রীপুর (দক্ষিণ) ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে ইউনিয়নের পাঠাবুকা গ্রামে অবস্থিত এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি বন্ধ থাকে। এখন পর্যন্ত এটি বন্ধ রয়েছে।
শ্রীপুর (দক্ষিণ) ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ইউপি সদস্য জাকেরীন-উর-রশীদ শিমুল জানান, ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ অসচেতন ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের ২০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি কোনো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নেই। যেটা আছে সেটাতো দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। তাই বেশির ভাগ লোক রোগবালাই নিরাময়ে স্থানীয় ফার্মাসিস্ট ও কবিরাজদের দ্বারস্থ হন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পাঠাবুকা গ্রামের বাসিন্দা চয়ন আহমেদ বলেন, এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
জুবায়ের মিয়া বলেন, ইউনিয়নবাসীর স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি চালু করতে আমরা বহু আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মির্জা রিয়াদ হাছান বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ